বিশ্বজিত রায়::
সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। মনোনয়নবঞ্চিতরা বলছেন এটি চূড়ান্ত না, প্রাথমিক বাছাই।
নির্বাচন ঘিরে জনসমাবেশে অংশ নিচ্ছেন বঞ্চিত ও মনোনীত উভয়েই। সমাবেশে প্রার্থীতা পরিবর্তন করে চূড়ান্ত মনোনয়নের দাবি জানাচ্ছেন বঞ্চিতরা। বিশেষ করে সম্পদশালী আসন সুনামগঞ্জ ১-এ বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হক ও বঞ্চিত কামরুজ্জামান কামরুলকে নিয়ে সরগরম হাওর ভাটির জেলা সুনামগঞ্জ। দু’জনই তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। প্রয়াত সংসদ সদস্য নজির হোসেনের মাধ্যমে রাজনীতিতে হাতেখড়ি দু’জনের। বিএনপির পদবীধারী এ দু’জন ছাড়াও সুনামগঞ্জ-১ আসনে কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমানও সভা-সমাবেশে নিজের প্রার্থীতার জানান দিচ্ছেন। তবে জনপ্রিয়তায় প্রায় হাফডজন প্রার্থীর মাঝ থেকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ কামরুলকেই এগিয়ে রাখছেন।
নির্বাচনী মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মনোনয়ন পাওয়ায় নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ করে ধানের শীষে ভোট চাইছেন আনিসুল হক। এছাড়া বৈরী পরিবেশে রাজনীতি ও জেল-জুলুমের কথা বলতে গিয়ে আবেগঘন বক্তব্য দিচ্ছেন কামরুল।
হাজার হাজার মানুষ তার বক্তব্য সমর্থন করে স্লোগান দিচ্ছেন--
‘এই সেই বুঝি না, কামরুল ছাড়া মানি না’; ‘ভক্করচক্কর বাদ দেও, কামরুল ভাইকে কার্ড দেও।’
মনোনয়ন ঘোষণার আগে (২০ অক্টোবর) ঢাকায় বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠকে সুনামগঞ্জ-১ আসনের আনিসুল হক, কামরুজ্জামান কামরুল ও নজির হোসেনের সহধর্মিণী সালমা নজির ডাক পেয়েছিলেন। এর মধ্য থেকে আনিসুলকে প্রার্থী ঘোষণা করে দলীয় হাইকমান্ড। মনোনয়ন যুদ্ধে হেরে যান কামরুল ও সালমা নজির। কিন্তু আনিসুল ও কামরুল সভা-শোডাউন করলেও সালমা নজির অনেকটা নীরব। স্বামীর সংসদীয় আসন পুনরুদ্ধারে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন তিনি।
জনশ্রুতি আছে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে নজির হোসেনের হাত ধরে। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৮ সালসহ এ আসনে মোট পাঁচবার নির্বাচন করেছেন তিনি। এর মাঝে ২০০১ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নজির স্থাপন করেছিলেন নজির হোসেন। তখন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী বরেণ্য রাজনীতিক সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে ৩২ হাজার ৮৭৪ ভোটে হারিয়ে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছিলেন নজির হোসেন। শুধু ভোটের রাজনীতি না, সাংগঠনিক দক্ষতায় দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে জেলা বিএনপির সভাপতি, সম্পাদকের দায়িত্ব পালনেও ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ মৃত্যু হয় নজির হোসেনের। স্বামীর অবর্তমানে সহধর্মিণী সালমা নজির প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছেন। বিএনপির বিজয় পুনরুদ্ধারে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী আসনটিকে বিএনপির দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলেছেন। দল যাকেই মনোনীত করুক, আমার চাওয়া ধানের শীষের বিজয়।’ তবে একই ছায়াতলে থেকে আনিসুল-কামরুলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া ২০১৯ সালে দলীয় সিদ্ধান্ত না মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করে পরাজিত হন আনিসুল। শৃঙ্খলা ভঙ্গ করায় তখন (২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) দল থেকে বহিষ্কার করা হয় তাকে। পরে যদিও বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।
অপরদিকে, বিএনপির জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুজ্জামান কামরুল এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। দলের দুঃসময়ে দলছুট হননি। দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নজির আছে তাঁর। তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাবস্থায় ২০১৭ সালে হাওর বিপর্যয়ের সময় কৃষকের সাথে ফসল রক্ষায় দিনরাত বাঁধে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র প্রতীকে আনিসুলকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান হওয়া কামরুল ২০১৯ সালে দলের সিদ্ধান্ত মেনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন।
তবে ২৫ অক্টোবর জামালগঞ্জের সাচনা বাজারের সমাবেশে এক ভক্তের হাত থেকে নেওয়া দশ লাখ টাকার চেক এবং একাধিক স্থানে টাকার মালা গলায় নিয়ে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েন কামরুল। পরে চেক ফিরিয়ে দিয়ে এগুলো ভক্তের ভালোবাসা ও আবেগ বলে বিতর্ক এড়ানোর চেষ্টা করেছেন তিনি।
তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির স্বাক্ষর ক্ষমতাপ্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক জুনাব আলী বলেন, জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে কামরুল এগিয়ে, এটা সত্য। আনিসুল-কামরুল দুজনেই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিলেন। মোটকথা চূড়ান্ত মনোনয়ন যে পাবে আমরা তার পক্ষে কাজ করব।
কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে সমন্বয় করে কে রাজনীতি করেছে তার শ্রেষ্ঠ বিচারক জনগণ। জনগণের আকাক্সক্ষা বিবেচনায় আমার পূর্ণ বিশ্বাস দল মনোনয়নের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। জনগণই আমার রাজনীতির পূর্ণ শক্তি। আনিসুল হক গণমাধ্যমে বলেছেন, মনোনয়ন পাওয়ার পর আমি বঞ্চিত প্রার্থীদের সাথে যোগাযোগ করেছি। দলে সকলের ত্যাগ ও অবদান আছে। সকলকে নিয়েই ধানের শীষের প্রচারণায় নামতে চাই। সবাই মিলে সুন্দর, সাবলীল, ভ্রাতৃত্ববোধের সুনামগঞ্জ-১ গড়তে চাই।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন বলেন, সকল বিষয় বিবেচনা করেই কেন্দ্র প্রার্থীতা ঘোষণা করেছে। পরিবর্তনের বিষয়ে কিছু জানি না।
উল্লেখ্য, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর ও মধ্যনগর) আসনে আনিসুল হক, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে কয়ছর এম আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারা বাজার) আসনে কলিম উদ্দিন মিলন দলের মনোনয়ন পেয়েছেন। সুনামগঞ্জ-৪ ও সুনামগঞ্জ-২ আসনে বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী ঘোষণা বাকি আছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
সুনামগঞ্জ-১ আসন
নজির হোসেনের দুর্গ নিয়ে দুই শিষ্যের কাড়াকাড়ি, মনোনয়নে আনিসুল, জনপ্রিয়তায় এগিয়ে কামরুল
- আপলোড সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৪:৩৮:৩৩ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৯-১১-২০২৫ ০৪:৫২:৪৫ পূর্বাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ

স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক সুনামকণ্ঠ